Al-ihda Academy

শিক্ষা কারিকুলাম : ভাবনার বিষয়!

Share:

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড কথাটি চিরসত্য ও সর্বজনবিদিত হলেও বর্তমানে যেন এ বাক্য তার গুরুত্ব হারাচ্ছে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে অবহেলিত ও গুরুত্বহীন বিভাগে পরিণত হচ্ছে এখন শিক্ষা বিভাগ। আওয়ামী লীগের গত মেয়াদের (২০১৮-এর সরকার) শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সময় থেকে এটি দৃশ্যমান হচ্ছে বেশ পরিষ্কারভাবে। প্রথমে করোনাকালীন ছুটিএরপর ঠুনকো অজুহাতে দীর্ঘ ছুটিপরীক্ষা মওকুফঅটোপাশসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছেতা তো ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই। এর সাথে মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে এসেছে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম। এতে পাঠ্যপুস্তকের যে বেহাল দশা বানিয়ে দেওয়া হয়েছেতা নিয়ে তো অভিভাবকশিক্ষাবিদউলামায়ে কেরাম ও অংশীজনেরা বলে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন থেকে। এ কারিকুলাম শুধু ধর্মসংস্কৃতি ও আবহমান কাল থেকে চলে আসা এদেশের সভ্যতার বিরুদ্ধেই অবস্থান নেয়নিবরং তা সাধারণ শিক্ষার বিকাশেও অকার্যকর বলে মন্তব্য করে যাচ্ছেন শিক্ষা-সাহিত্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ইতিমধ্যেই জাতীয় পত্রিকাগুলোতে এ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বহু বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ। অর্থাৎ কারিকুলামের অবস্থা দাঁড়িয়েছে― ‘না ঘর কা না ঘাট কা

এরই মধ্যে নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে পূর্বের দল। এবার পূর্বের মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে আগের সরকারের উপমন্ত্রীকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছে। আর শপথ নেওয়ার পরই তিনি ঘোষণা দিয়েছেনশিক্ষানীতিতে পূর্বের ধারাবাহিকতা বহাল থাকবে। অর্থাৎ যেই লাউ সেই কদুই থেকে যাচ্ছে। এছাড়া এ ভদ্রলোকের পূর্বের বিভিন্ন বক্তব্যপূজার অনুষ্ঠানে গিয়ে শক্ত ঈমানের ব্যাখ্যা প্রদানসহ অনেক কারণে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে বহু অভিভাবক ও দ্বীনদার মহলে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা এ জাতিকে রক্ষা করুন। আমাদের কোমলমতি শিশুগণযারা হবে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধারতাদের ঈমান-আকীদাসহ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার পথের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে দিন।

আহলে মাদারিসের কাছে গুযারিশ

পরিশেষে এদেশের আকাবির উলামা হযারাত ও কওমী বোর্ডগুলোর কর্ণধারদের কাছে একটি আরজ। এখন মাত্র রজব মাস শুরু। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ মাদরাসার নেসাব শেষ। চলছে বুখারী খতমের প্রচলিত আয়োজনগুলো। কয়েক বছর থেকেই দেখা যাচ্ছে এ প্রবণতা।  শাওয়াল থেকে জুমাদাল আখিরাহ হাতে গুণলে যদিও ৯ মাস হয়কিন্তু কুরবানীর ঈদের পূর্বাপর ছুটি২টি পরীক্ষাপরীক্ষা-পূর্ব খেয়ার ও পরীক্ষা-পরবর্তী ছুটি এবং বছরের শুরুতে ভর্তি কার্যক্রমের সময়গুলো বাদ দিলে সময় থাকে ৬ মাসের মতো। অথচ কওমীর নেসাবের বিশালতা এবং তা পাঠদানের গুরুত্ব কার অজানা। কওমী মাদরাসার বৈশিষ্ট্যাবলির অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল এর কর্মসময়ের দীর্ঘতা। আজ বিভিন্ন পরীক্ষার ওসিলায় এবং আরো বহু অজুহাতে যা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বলাবাহুল্য যেপড়াশোনা হচ্ছে পরীক্ষা-কেন্দ্রিকঅথচ দাওরায়ে হাদীসসহ উপরের জামাতগুলোর বিষয় ও কিতাবাদির সকল আবওয়াবের যে আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছেতা তো কারো অজানা নয়। ফিকহতাফসীর ও হাদীসের কিতাবগুলোর পাঠদান হওয়া দরকার ব্যাখ্যাসহ যুগ-উপযোগী পন্থায়। যা কয়েক মাসের সংক্ষিপ্ত সময়ে কিছুতেই সম্ভব নয়। এখন আকাবিরের যুগের সে ইনহিমাকওয়ালা যী-ইস্তিদাদ তালিবুল ইলম কয়জন আছে! উলামায়ে কেরাম যেহেতু জাতির ঈমান-আকীদা ও তাহযীব-তামাদ্দুনের হেফাজতকারী ও তাদের রাহবারতাই বর্তমান ও ভবিষ্যতের আলেমদেরও তো তৈরি হয়ে উঠতে হবে সে যোগ্যতা নিয়েযা ব্যাপক তালীম-তাআল্লুম ও তারবিয়াত ছাড়া সম্ভব নয়।

শিক্ষাকারিকুলাম ও পাঠদানের সময়-মেয়াদ যত সংকুচিত হবেততই কম যোগ্যতার আলেম তৈরি হবে। দেশের শিক্ষাবিদ ও মুফাক্কির উলামায়ে কেরাম নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। মেহেরবান আল্লাহ আমাদের দ্বীনী মহলের পথ চলাকে সহজ করুনমসৃণ করুন এবং আরো বেশি উপকারী পন্থায় অগ্রসর হওয়ার তাওফীক দিন।

 

Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *